Hot Posts

6/recent/ticker-posts

কেমন পশু কোরবানি করা যাবে?

কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। সঠিক পশু নির্বাচন কোরবানির গ্রহণযোগ্যতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরবানির গুরুত্ব নিয়ে পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা হালাল পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩৪) কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। সঠিক পশু নির্বাচন কোরবানির গ্রহণযোগ্যতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু নির্বাচনের মূল দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো: ✅ কোরবানির জন্য বৈধ পশুর ধরন ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী নিম্নলিখিত পশুগুলো কোরবানির জন্য বৈধ: উট গরু মহিষ ছাগল ভেড়া দুম্বা 📏 পশুর বয়স সংক্রান্ত শর্তাবলী কোরবানির পশুর নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ হওয়া আবশ্যক: উট: কমপক্ষে ৫ বছর গরু ও মহিষ: কমপক্ষে ২ বছর ছাগল: কমপক্ষে ১ বছর ভেড়া ও দুম্বা: কমপক্ষে ১ বছর; তবে যদি ৬ মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা দেখতে ১ বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয়, তাহলে তা কোরবানির জন্য বৈধ ❌ যেসব পশু কোরবানির অযোগ্য নিম্নলিখিত ত্রুটিযুক্ত পশু কোরবানির জন্য অযোগ্য: অন্ধ: দুই চোখ বা একটি চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ ল্যাংড়া: যে পশু স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে অক্ষম অত্যন্ত দুর্বল: যে পশুর হাড়ে মজ্জা নেই শারীরিক ত্রুটি: যে পশুর কান, লেজ বা শিংয়ের অর্ধেক বা তার বেশি কাটা দাঁতহীন: যে পশুর অধিকাংশ দাঁত নেই 🧾 অতিরিক্ত নির্দেশনা শরীক হওয়া: উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারেন। প্রত্যেকের অংশ সমান হতে হবে এবং সকলের নিয়ত এক হওয়া আবশ্যক। নিয়ত: কোরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। পশু নির্বাচন: হৃষ্টপুষ্ট, সুস্থ ও দোষত্রুটিমুক্ত পশু নির্বাচন করা উত্তম। পশুর বয়স নির্ধারণে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমার কাছে কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার কাছে পৌঁছায় একমাত্র তাকওয়া।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩৭) একদা জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরবানি কী? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, কোরবানি হচ্ছে তোমাদের আদি পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনাদর্শ। সাহাবি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোরবানির ফজিলত কী? রাসুল (সা.) বললেন, পশুর পশমের পরিবর্তে একেকটি করে নেকি দেওয়া হয়।’ (মিশকাত, হাদিস : ১২৯) রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই কোরবানিদাতার কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায় এবং তার অতীতের সব গুনাহ মোচন করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১/১৮০) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোরবানির দিন আল্লাহর কাছে কোরবানি অপেক্ষা উত্তম কোনো আমল আর নেই।’ (মিশকাত, হাদিস : ১৯৩৭) বিশিষ্ট সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) পবিত্র মদিনায় দশ বছর জীবনযাপন করেছেন, প্রত্যেক বছরই তিনি পশু কোরবানি করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১/১৮৯) কোরবানির জন্য সুস্থ-সবল পশু নির্ধারণ জরুরি। যদি কোনো পশুর অধিকাংশ দাঁত না থাকে তাহলে সেই পশু কোরবানি করা যাবে কিনা? এমন প্রশ্নে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন— কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দিয়ে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ওই পশু কোরবানি করা যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮) সঠিক নিয়ম মেনে কোরবানি করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই পশু নির্বাচনের সময় উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

Post a Comment

0 Comments